সিজার নাকি নিরব ঘাতক!

অপারেশনের মাধ্যমে মায়ের পেট কেটে বাচ্ছা ডেলিভারি করা কে সিজারিয়ান ডেলিভারি বলা হয়। সহজ বাংলায় যাকে সিজার বলে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যখন বাচ্ছা ডেলিভারি সম্ভব হয় না, তখন সিজার বা সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্ছা ডেলিভারি করা হয়।



সিজারিয়ান ডেলিভারির কারণ বা যে উপসর্গগুলো থাকলে ডাক্তার সিজার করতে বলে:

Obstructed labour বা বাধা প্রাপ্ত ডেলিভারি, পেটে একের অধিক বাচ্ছা থাকলে, পেটের বাচ্ছার Abnormal positions বা বাচ্ছা পেটের ভেতর উল্টা বা আড়াআড়ি থাকলে,মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, Fetal distress বা পেটের বাচ্ছার শ্বাস  নিতে কষ্ট হলে, Amniotic fluid বা পেটে পানির পরিমান কমে গেলে, Cord around the neck বা বাচ্ছার গলায় নালি পেঁচিয়ে থাকলে, Placenta বা গর্ভফুল জরায়ুর মুখে লেগে থাকলে, Hydrocephalus baby, এছাড়া আরো অনেক কারণ আছে। Re eclampsia, eclampsia, বাচ্ছা স্বাভাবিক এর তুলনায় বড় হলে, Abruptio placenta, cord prolapse, induction failure ইত্যাদি।



আমাদের দেশে সিজারিয়ান ডেলিভারির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ:

 

উপরে উল্লেখিত কারণ গুলো হলো সিজারের প্রত্যক্ষ কারণ, এখন বলি পরোক্ষ কারণ গুলো-

আমাদের দেশে অধিকাংশ হাসপাতাল, ক্লিনিক গুলোতে নিজেদের লাভের জন্য রোগীকে সিজারে নামায়, এখানে রোগী admission হইলে রোগীর পেটের ভিতরে পানি কম,বাচ্চার হার্টবিট কম,বাচ্চা পেটের ভিতর পায়খানা করে দিয়েছে,বাচ্চার ওজন বেশি, এইসব বলে রোগীর লোক কে ভীত করে তোলে,তখন তারা রিস্ক নিতে চায় না। তাই তারা একপ্রকার বাধ্য হয়ে সিজার করতে রাজি হয়ে যায়!

আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রোগী শখের বসে নিজেই সিজার করতে ইচ্ছুক, তাদেরপরিবারও চায় সিজার করতে, সিজার যেন এখন ফ্যাশন হয়ে গেছে। নরমাল ডেলিভারির কষ্ট তারা সহ্য করতে চায়না। আর এসব কারণে দিন দিন সিজারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।




এখন জানবো সিজারিয়ান ডেলিভারির অপকারিতা গুলো কি কি:

* সিজারে ডেলিভারি হওয়ার পর ইউটেরাস ইনফেকশন ডেভেলপ করে, যার কারণে পরবর্তী সিজারে রিস্ক বেড়ে যায়।
* সিজারে ডেলিভারি হওয়ার পর পোস্ট পারটাম হেমোরেজ বৃদ্ধি পায় যারফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
* এনেস্থিসিয়ার  পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় যা দীর্ঘ দিন স্থায়ী হয়।
* সার্জিক্যাল ইঞ্জুরী হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
* ক্ষতে  ইনফেকশন হয় যা অনেক কষ্টদায়ক।
* ভবিষ্যৎ প্রেগনেন্সিতে ঝুকি থাকে।
* অপারেশনের কারণে অনেক ব্লাড লস হয় এর কারণে এনিমিয়া দেখা দিতে পারে।
* রোগী ভারী কোনো কাজ করতে পারে না।


সব শেষে একটায় কথা বলতে পারি, আমরা সচেতন না হইলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ কখনোই সম্ভব নয়। এবং যে সমস্ত হসপিটাল গুলো শুধুমাত্র ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পরিচালনা করা  হয়, সেই সকল হাসপাতালগুলোর পরিচালক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের কাছে আবেদন শুধুমাত্র ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয় নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেয়ার উদ্দেশ্য থাকতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা থেকে আমরা  বের হয়ে আসতে পারব। 


মোছাঃ শাফিয়া খাতুন

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم